মিডিয়ার আতঙ্ক সৃষ্টিকারী হেডলাইন: জনমনে বাড়াচ্ছে উদ্বেগ ও প্যানিক অ্যাটাক
গত কয়েক মাসে টেলিভিশন খবরের চ্যানেলগুলো এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় আতঙ্ক সৃষ্টিকারী হেডলাইনের ব্যবহার বেড়েছে। প্রতিদিনের খবরে ভয়াবহতা, অতিরঞ্জিত শব্দচয়ন এবং অর্ধসত্য তথ্য উপস্থাপনের ফলে দর্শক-শ্রোতাদের মধ্যে উদ্বেগ, মানসিক চাপ এবং প্যানিক অ্যাটাকের মতো সমস্যা দেখা দিচ্ছে। মনোবিদ ও মিডিয়া বিশ্লেষকরা এই প্রবণতাকে ‘সেনসেশনালিজম’ হিসেবে চিহ্নিত করে এর নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে সতর্ক করছেন।
কীভাবে তৈরি হচ্ছে আতঙ্ক?
খবরের চ্যানেলগুলো দর্শকদের আকর্ষণ করতে এবং রেটিং বাড়াতে প্রায়ই নিম্নলিখিত কৌশল ব্যবহার করছে:
- অতিরঞ্জিত শিরোনাম: “মহামারী আসন্ন!”, “অর্থনীতি ধ্বংসের পথে!”, “আর কত রক্ত দেখবে দেশ?”—এ ধরনের হাইপারবোলিক হেডলাইন শুনেই অনেকের হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়।
- অসম্পূর্ণ তথ্য: অনেক সময় খবরের সম্পূর্ণ প্রেক্ষাপট বা সমাধান না দেখিয়ে শুধু সমস্যাটিকেই বড় করে তুলে ধরা হয়।
- গণহারে নেগেটিভিটি: দিনের ৯০% খবরই যদি হয় হত্যা, দুর্ঘটনা, রাজনৈতিক অস্থিরতা বা অর্থনৈতিক বিপর্যয়, তবে তা মানুষের মনে নিরাপত্তাহীনতা বাড়ায়।
- সোশ্যাল মিডিয়ার ভাইরাল আতঙ্ক: ফেসবুক, ইমো বা টিকটকে ভুয়া বা অর্ধসত্য খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, যা মানুষকে আতঙ্কিত করে তোলে।
মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. বলেন, “আমার ক্লিনিকে অনেক রোগী আসেন যারা খবর দেখার পর ঘুমাতে পারেন না, বুকে ব্যথা বা শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন। কিছু ক্ষেত্রে এটি প্যানিক ডিসঅর্ডারে রূপ নেয়। মিডিয়া যদি প্রতিদিন শুধু ভয়াবহ খবর প্রচার করে, মানুষের মনে একটি ‘সাইকোলজিক্যাল ট্রমা’ তৈরি হয়।”
সমাধানের পথ
- মিডিয়ার দায়িত্বশীলতা: খবর পরিবেশনে ভারসাম্য রাখা, সমাধান-ভিত্তিক রিপোর্টিং এবং ফ্যাক্ট চেকিং জরুরি।
- দর্শকদের সচেতনতা: খবর বিশ্লেষণ করা, একাধিক সূত্র থেকে যাচাই করা এবং সোশ্যাল মিডিয়ার সেনসেশনালিজম এড়িয়ে চলা।
- নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার ভূমিকা: প্রেস কাউন্সিলের উচিত মিডিয়ার আতঙ্ক সৃষ্টিকারী কনটেন্টের বিরুদ্ধে নির্দেশিকা জারি করা।
উপসংহার
মিডিয়ার মূল কাজ তথ্য প্রদান, কিন্তু যখন তা ভয় ও উত্তেজনা ছড়িয়ে জনমনে আতঙ্ক তৈরি করে, তখন তা সমাজের জন্য ক্ষতিকর। দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা এবং সচেতন দর্শকচক্রই পারে এই প্রবণতা রোধ করতে। প্যানিক নয়, প্রয়োজন সঠিক তথ্য ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি।
প্রতিবেদনটি তৈরি করতে মনোবিদ, মিডিয়া বিশ্লেষক এবং নিউজ সাংবাদিকদের সাথে কথা বলা হয়েছে।
✍️Chowdhury Jasimuddin (সম্পাদক সত্যপ্রদীপ পত্রিকা)